রুকইয়ার গােসল

রুকইয়ার গােসল খুবই উপকারি এবং জরুরি অনুষঙ্গ।জিনের রােগীর ক্ষেত্রে প্রতিদিন রুকইয়ার পর গােসল করিয়ে দিলে জিনের ওপর বেশ ধকল যায়, আর রােগী তাৎক্ষনিকভাবে ঠাণ্ডা হয়ে যায়

 আর জাদু এবং বদনজরের চিকিৎসাতে তাে রুকইয়ার গােসল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রুকইয়ার গােসলের বেশ কিছু পদ্ধতির বিবরণ হাদীস, আকাবির-আসলাফের বর্ণনা ও অন্যান্য আলিমদের থেকে পাওয়া যায়।

 ক. হাদীসে নববীতে রুকইয়ার গােসল

 ১. বদনজর বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ভাগ্যের চেয়েও আগে বেড়ে যায় এমন কিছু যদি থাকত তবে সেটা হতাে বদনজর। যদি (বদনজরের জন্য) তােমাদের গােসল করতে বলা হয়, তবে এর জন্য গােসল করাে।

২. আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, যে ব্যক্তির বদনজর অন্যের ওপর লাগত, তাকে ওযু করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হতাে। এরপর ওই পানি দিয়ে সেই ব্যক্তিকে গােসল করানাে হতাে, যার ওপর বদনজর লেগেছে।এভাবে একবার গােসল করলেই সাধারণত বদনজর দূর হয়ে যায়।

৩. অন্য দুআ পড়ে পানিতে ফু দিয়ে গােসল করার উদাহরণও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরাম থেকে পাওয়া যায়। যেমন: সাবিত ইবনু কাইস ইবনু শামমাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি একবার অসুস্থ ছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে আসলেন। এরপর এই দুআটি পড়লেন:

اگف البأس رب الناس

(হে মানুষের প্রভু, রােগমুক্ত করুন) 

এরপর একটি পাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার বাত্বহান প্রান্তরের এক মুঠ মাটি রাখলেন, এরপর সেখানে পানি ঢাললেন এবং তাতে ফু দিলেন। তারপর ওই পানি তার (সাবিত রা.-এর) ওপর ঢেলে দেওয়া হলাে। 

বিন বায রহ, রুকইয়ার গােসলের নিয়ম বর্ণনা করার সময় উপরিউক্ত হাদীসটি উল্লেখ। করেছেন দলিল হিসেবে। ) 

খ. বিভিন্ন যুগের আলিমদের মতে রুকইয়ার গােসল:

 ১. জাদুর চিকিৎসায় রুকইয়ার বিখ্যাত গােসল হচ্ছে, বরই পাতা বেটে পানিতে মিশ্রিত করা, এরপর কিছু দুআ পড়ে পানিতে ফু দিয়ে সেটা খাওয়া এবং গােসল করা। 

পূর্ববর্তী আলিমদের অনেক বর্ণনাতে এই গােসলের কথা পাওয়া যায়। তবে এই গােসলের সময়। পড়ার দুআগুলাে কী হবে—সে বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে।ইমাম কুরতুবী রহ. জাদুর চিকিৎসা বর্ণনা করতে গিয়ে এই গােসলে শুধু আয়াতুল কুরসী পড়তে বলেছেন। আর ইবনু কাসীর রহ. সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ার প্রতি গুরুত্বারােপ করেছেন।

২. ওয়াহাব ইবনুল মুনাব্বিহ রহ. থেকে গােসলের নিয়মটি বর্ণিত আছে এরকমভাবে: সাতটি বরইয়ের পাতা পিষে পানিতে ঢেলে নাড়তে থাকুন এবং আয়াতুল কুরসী, সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পড়ে পড়ে ফু দিতে থাকুন। এরপর সেই পানি তিন ঢােক পান করুন এবং বাকিটা দিয়ে গােসল করুন।

শাইখ ওয়াহিদ বিন আবদুস সালামও এভাবেই বলেছেন। তবে এর সাথে আরও বলেছেন, সেই পানি গরম করবে না বা সেখানে অন্য পানি মেশাবে না। আশা করা যায়, প্রথম গােসলেই জাদু নষ্ট হয়ে যাবে। আর এভাবে কয়েকদিন গােসল করলে ইনশাআল্লাহ রােগী সুস্থ হয়ে উঠবে।

শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ. এই বরই পাতার গােসলের নিয়ম বর্ণনা করেছেন শাইখ আবদুর রহমান বিন হাসানের ফাতহুল মাজীদ গ্রন্থ থেকে, 

তবে সেখানে পানিতে বরই পাতা গুলিয়ে অনেক কিছু পড়তে বলা হয়েছে। যথা: 

১. সূরা ফাতিহা 

২. আয়াতুল কুরসী 

৩. সূরা আরাফের ১০৬-১২২ নং আয়াত 

৪. সূরা ইউনসের ৭৯-৮২ নং আয়াত 

৫. সুরা ত্বহা এর ৬৫-৬৯ নং আয়াত

৬, সূরা কাফিরুন। 

৭. সূরা ইখলাস [তবার] 

৮. সূরা ফালাক [তবার] 

৯. সূরা নাস [৩বার] । 

রুকইয়ার গােসল-Aazeen Of Islam

সাথে কিছু দুআ যেমন- ১০. ‘আল্লাহুম্মা রব্বান নাস, আযহিবিল বাস। ওয়াশফি, আনতাশ শাফি। লা শিফাআ ইল্লা শিফাউক। শিফাআন লা ইয়ুগা-দিরু সাকামা।’ [৩বার]। 

১১. ‘বিসমিল্লাহি আরকীক মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যীক। মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদিন; আল্লাহু ইয়াশফীক। বিসমিল্লাহি আরকীক। [৩ বার]।

 সেই ফাতাওয়াতে বিন বায রহ. অবশ্য একটি সহজ নিয়মের কথাও বলেছেন— জাদুতে আক্রান্ত রােগীর ওপর অথবা কোনাে একটি পাত্রে পানি নিয়ে উপরে উল্লিখিত আয়াত এবং দুআ সমূহ পড়ে ফু দেবে। 

এরপর জাদুতে আক্রান্ত ব্যক্তি সে পানি পান করবে, আর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গােসল করবে। প্রয়ােজন মতাে এক বা একাধিকবার এরকম করলে আল্লাহর ইচ্ছায় রােগী আরােগ্য লাভ করবে

. আমরা আরও যেসব গােসলের পরামর্শ দিই। 

১. জাদুর সাধারণ রুকইয়াহ (এটি মূলত শাইখ ওয়াহিদ আব্দুস সালামের একটি পদ্ধতি এবং বিন বায রহ.-এর পদ্ধতির সারসংক্ষেপ)। …একটি বােতলে পানি নিন, এরপর 

ক. সূরা আরাফ: ১১৭-১২২ 

খ. সূরা ইউনুস: ৮১-৮২ 

গ. সূরা ত্বহা: ৬৯ নম্বর আয়াত 

ঘ. সূরা ফালাক, সূরা নাস সব তিন বার করে পড়ে পানিতে ফু দিন।

এই বিষয়ে আমাদের ভিডিও

এই পানি দুই বেলা খাবেন, আর প্রতিদিন গােসলের পানিতে মিশিয়ে গোসল করতে তবে এভাবে একবারে বােতলে না পড়ে যদি প্রতি বার খাওয়া বা গােসলের পা আয়াতগুলাে পড়ে ফু দেওয়া হয় তবে সেটা আরও উত্তম। 

বদনজরের রুকইয়ার গােসল 

 একটা বালতিতে পানি নিয়ে তাতে দুই হাত ডুবিয়ে যেকোনাে দরুদ শরীফ, সূরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসী, সূরা কাফিরুন, ইখলাস, ফালাক, নাস শেষে আবার কোনাে দরুদ শরীফসব ৭বার করে পড়া, এরপর এই পানি দিয়ে গােসল করা। এটা মুম্বাইয়ের মুফতী জুনাইদ সাহেবের লেকচার থেকে নেওয়া। তবে এটা সচরাচর বদনজরের রােগীকে করতে বলা হলেও জাদু ও জিনের রােগীর জন্যও এটা অনেক উপকারি।

তবে খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে, এসব গােসলের হুবহু নিয়ম হাদীস থেকে নেওয়া নয়; বরং হাদীস থেকে মূলনীতি গ্রহণ করে আলিমদের অভিজ্ঞতালব্ধ গবেষণা থেকে উদ্ধৃত।

রুকইয়ার গােসল-Aazeen Of Islam

 তাই সময় কম থাকলে সংক্ষেপ করে সাত বারের জায়গায় তিন বার পড়তে পারে, দুরুদ শরীফ চাইলে এক বারও পড়তে পারে। চাইলে সূরা কাফিরুন বাদ দেওয়া যায় চাইলে। এসবের সাথে আরও কিছু দুআ এবং আয়াত পড়া যায়। আর পানিতে হাত ডুবিয়ে বসে। থাকার সুযােগ না পাওয়া গেলে পড়ার পর পানিতে ফু দিয়ে গােসল করলেই যথেষ্ট হবে। ইনশাআল্লাহ।।

এখানে মূলনীতি হচ্ছে, যা সরাসরি হাদীস থেকে নেয়া হবে, সেটা হুবহু ওই সংখ্যাতেই বা ওই পরিমাণেই করতে হবে। আর যদি এটা ইজতিহাদ হয় তবে অভিজ্ঞ কাউকে জিজ্ঞেস করে সংখ্যা (এক, তিন, সাত এরকম) কমবেশি করতে পারেন বেশি পড়লে বেশি ফায়দা, কম পড়লে কম। তবে আপনার জন্য সর্বনিম্ন কতটুকু ” আবশ্যক, এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারও সাথে কথা বলে নেওয়া ভালাে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *