জ্বীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস,লেখকঃআল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি রহঃ

জ্বীন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস
প্রণীতঃ আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ)
‘লাকৃতুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জ্বানু’ গ্রন্থের
সহজ-সরল-সাবলীল অনুবাদ
অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মােহাম্মদ হাদীউজ্জামান
ডাউনলোড করুন এখান থেকে
Aazeen Of Islam
যাতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ প্রাপ্য বুকভরা দুরুদ
ও সালাম তার রাসুলের জন্য।
প্রসঙ্গ কথা,
আসসালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহ। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা,
আমরা, মুসলমানরা, জ্বিন’ এর অস্তিত্বে বিশ্বাসী।
কারণ, মহাস্রষ্টা আল্লাহ পবিত্র কোরআনের বহু জায়গায় জ্বিনের কথা উল্লেখ করেছেন সুস্পষ্ট ভাষায়।
প্রিয়নবীজির প্রিয় হাদীসেও জ্বিন-বিষয়ক বহু আলােচনা পাওয়া যায়
। তাই জিনের অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখার বিষয়টি ঈমান-আকীদা’র অংশ হয়েই দাঁড়ায়।
মূলতঃ অমুসলিম পণ্ডিতদের মধ্যে রয়েছে ‘ভূত’ নিয়ে অদ্ভুতরকমের বিভ্রান্তি।
এদের মধ্যে একদল পণ্ডিত ভূতের অস্তিত্বে বিশ্বাসী ওরা নিজেদের বিশ্বাসের স্বপক্ষে
নানান ধরনের যুক্তি প্রমাণ অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন।
কিন্তু আরেকদল অমুসলিম পণ্ডিত ওগুলােকে পুরােপুরি নস্যাৎ করে দেন।
আসলে উভয় দলই বিভ্রান্ত কেননা ‘ভূত’ বলে কিছুই নেই।
আছে ‘জ্বিন‘
জ্বিনদের বিভিন্ন কার্যকলাপ মাঝে-মধ্যে দেখে শুনে কেউ কেউ সেগুলােকে ‘ভূতের কারসাজি’ বলে মনে করেন
এবং এগুলাের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হাতড়াতে থাকেন ‘ভূতে অবিশ্বাসীরা।
কিন্তু আমরা, যারা জ্বিনের অস্তিত্বে বিশ্বাসী, জ্বিনদের বিষয়ে অনেক কিছুই। জানি না।
আমরা অনেকেই জানি না জিনরা কী খায়, কোথায় থাকে, কীভাবে বংশ বাড়ায়, মরে গেলে ওদের দেহ কোথায় যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাই, সঙ্গত কারণেই আমাদের মনে জ্বিনদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে অজস্র কৌতূহল দেখা দেয়,জানতে ইচ্ছা হয় জ্বিনবিষয়ক নানান খুঁটিনাটি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমাদের অনেকেরই এই স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূরণ হয় না।
কারণ জিনবিষয়ক নির্ভরযােগ্য বই-পুস্তক যেমন স্বল্প তেমনই দুষ্প্রাপ্য,বাংলায় তাে ছিলই না।
আমাদের ইসলামী জ্ঞানভাণ্ডারের প্রধানতম উৎস আরবীতে জ্বিনবিষয়ক গ্রন্থ লেখা হয়েছে হাতে গােনা মাত্র কয়েকটি।
সেগুলির মধ্যে অন্যতম আল্লামা বদরুদ্দীন শিবলী (রহু,) (৭২৯ হি.) প্রণীত আকামুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জান্ন ।
বিষয়বস্তুর বিচারে গ্রন্থটি যথেষ্ট ভালাে হলেও সাধারণ পাঠকদের পক্ষে পুরােপুরি উপযােগী নয়।
তাই এতে প্রয়ােজনমতাে সংযােজন বিয়ােজন ও পরিবর্তন পরিবর্ধনের পর সাধারণের উপযােগী করে আরেকটি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেন আরেক বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) (৯১১ হি.)।
আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ) তার ওই পাণ্ডুলিপির নামকরণ করেন লাতুল মারজ্বানি ফী আহকামিল জ্বান্ন। এটিকে জ্বিনবিষয়ক বিশ্বকোষও বলা যায়।
তাই আমরা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এই আকর গ্রন্থটি বেছে নিলাম এবং সাধ্যমতাে সহজ সরল সাবলীল অনুবাদের মাধ্যমে জ্বিন জাতির বিস্ময়কর ইতিহাস নামে পেশ করলাম।
বাংলার পাঠকদের কথা মাথায় রেখে গ্রন্থটি আগাগোড়া হুবহু অনুবাদ করা হয়নি কোনও কোনও বর্ণনা, একাধিকবার এসে যাওয়ার দরুন, বাদ দেওয়া হয়েছে।
কোনও কোনও অংশ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে ভুল বােঝাবুঝির সম্ভাবনা থাকার কারণে। একই বিষয়ের বিক্ষিপ্ত বর্ণনাগুলো আনা হয়েছে এই পরিচ্ছেদের অধীনে।
তাছাড়া পর্ব, পরিচ্ছেদ, অনুচ্ছেদ প্রভৃতি বিন্যাস এবং সেগুলির শিরােনাম উপশিরােনাম প্রভৃতির নামকরণের অধিকাংশ করা হয়েছে নিজেদের তরফ থেকে।
গ্রন্থটির অনুবাদে পাকিস্তানের প্রখ্যাত আলেম ইমদাদুল্লাহ আনওয়ার সাহেবের উর্দু তরজমা ‘তারীখে জ্বিন্নাত ওয়া শায়াত্বীন’
থেকে যথেষ্ট সাহায্য নেওয়া হয়েছে এবং তার নিজের পক্ষ থেকে সংযোজিত বর্ণনাসূত্রগুলিও এতে ব্যবহার করা হয়েছে।
আগেই বলা হয়েছে, এ গ্রন্থকে বলা যায় জ্বিনবিষয়ক বিশ্বকোষ, তাই এর মধ্যে কিছু ‘যঈফ’ এবং ‘মাউযূ বর্ণনাও থেকে যাওয়া অসম্ভব নয় ।
রূপক অর্থেও ব্যবহৃত হয়েছে অনেক বর্ণনা সুতরাং আকায়িল ও ইবাদতের ক্ষেত্রে গ্রন্থটিকে পুরােপুরি শরীয়তী গুরুত্ব দেওয়া চলবে না।
সাধ্যমতাে সাবধানতা সত্ত্বেও, স্বল্প যােগ্যতার কারণে, কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতিও থেকে যেতে পারে কোনও সহৃদয় পাঠকের নযরে তেমন কিছু ধরা পড়লে জানিয়ে দেওয়ার অনুরােধ রাখলাম।
আল্লাহ আমাদের সকলের মেহনত কবুল করুন।